অপেক্ষার প্রহর গুনছে ১১ শহর

রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবল। এসব মাঠেই হবে আসরের ৩২টি ম্যাচ। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া শেষ। এবার অপেক্ষার প্রহর গুনছে এসব শহর। ফুটবলপ্রেমীদের সামনে বিশ্বকাপের শহর মেলে ধরবে রাশিয়ান ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা স্বকীয়তা।

রাশিয়ায় রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন। দেশটির জীবন-ব্যবস্থা অত্যাধুনিক। সুউচ্চ স্থাপনা, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যত্রতত্র। ২৮টি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক ছড়িয়ে আছে পুরো দেশ জুড়ে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে বদলে গেছে পুরো রাশিয়া। ১৭৮ কিলোমিটার নতুন সড়ক যুক্ত হয়েছে। ২০টি রেল স্টেশনে বড় ধরনের সংস্কার হয়েছে। তিন শহরে বসেছে নতুন পাতাল রেল, সংস্কার করা হয়েছে একাধিক বিমানবন্দর। ১০ লক্ষাধিক পর্যটক আর দর্শকের আগমনে দেশটির অর্থনৈতিক ভিত আরো শক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজধানী মস্কো অপেক্ষায় ঐতিহ্যের ধারার সঙ্গে আধুনিকতা নিয়ে। এই শহরে আছে ক্রেমলিন ও রেড স্কয়ারসহ ইউনেস্কোর তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। রঙে-রঙিন সেন্ট ব্যাসিলস ক্যাথেড্রাল আর রেড স্কয়ার তো মস্কো তথা পুরো রাশিয়ার প্রতীক। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ত পাতাল রেল ব্যবস্থা এই মস্কোতে। বিশ্বজোড়া খ্যাতি আছে শপিংমল, রেস্টুরেন্ট আর নাইটলাইফের জন্য।

শহরের দুই বিখ্যাত ক্লাব স্পার্তাক মস্কো ও সিএসকেএ মস্কোর নিয়মিত পদচারণা ইউরোপীয় অঞ্চলে। ১১ শহরের মধ্যে কেবল মস্কোতেই দুইটি স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচ। এর মধ্যে আছে বিশ্বকাপের প্রধান ভেন্যু লুঝনিকি। এই মাঠে হবে উদ্বোধনী ম্যাচ, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। আরেকটি ভেন্যু হচ্ছে- স্পার্তাক।

৫২ লাখ জনসংখ্যার শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ। রাজধানী থেকে ৬৮৭ কিলোমিটার দূরে। শহরটির অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আনাগোনা এখানেই। বছরে ৫০ লাখেরও বেশি পর্যটক আসে এই শহরে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সেন্ট পিটার্সবার্গ সিটি সেন্টার স্বাগত জানাবে বিশ্বকাপের আরেকটি প্রতীক হিসেবে। এই শহরের বিখ্যাত ক্লাব জেনিত।

মস্কো থেকে ১ হাজার ৬৭৯ কিলোমিটার দূরের শহর সোচি। সমুদ্র ঘেঁষা সোচি ইউরোপের দীর্ঘতম শহর। শীতকালীন অলিম্পিকের সময় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এখানে। ফলে বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি সংস্কারের প্রয়োজন পরেনি। বিশ্বকাপের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রকল্প হিসেবে ফিশত্ অলিম্পিক স্টেডিয়াম বিবেচিত হচ্ছে। এই মাঠেই খেলা হবে।

কাজান। রাশিয়ার অন্যতম প্রাচীন শহর। কাজানকে বলা হয় তারুণ্যের শহর। এখানে আছে ৩০টি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়। বাস করছে ১ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী। শহরজুড়ে প্রাধান্য মুসলিম সংস্কৃতির। তবে রুবিন কাজান শহরের অন্যতম গর্ব। কাজান অ্যারেনা স্টেডিয়ামে ইউরোপের সবচেয়ে বড় আউটসাইড স্কিনটি রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার দ্বিতীয় রাজধানী হয়ে উঠেছিল সামারা। এখন আছে দেশটির গুরুর্ত্বপূর্ণ পরিবহন হাব, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন আর ব্যস্ত নদীবন্দর। প্রায় ৫০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার সামারা অ্যারেনা স্টেডিয়ামে বাছাই পর্বের বেশ কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

রাশিয়ার অন্যতম প্রাচীন, সঙ্গে সৌন্দর্যের শহর নিজনি নভগ্রাঁদ। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে থাকা বিশ্বের ১০০ শহরের একটি। নিজনি নভগ্রাঁদ স্টেডিয়াম ভলগা ও ওকা নদীর তীরে অবস্থিত। এই স্টেডিয়ামটিও প্রাকৃতির সৌন্দর্যের কারণে ইতোমধ্যেই সমাদৃত হয়েছে।

আয়োজক শহরের মধ্যে নবীনতম রোস্তভ। মস্কো থেকে হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের শহরটি বহন করে দক্ষিণ রাশিয়ার ঐতিহ্য। ‘ডন’ নদীর তীরে অবস্থিত রোস্তভ শহরের উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রোস্তভ অ্যারেনা স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের চারপাশে সাত কিলোমিটার সাইকেল পথ, ওয়াকওয়ে ও সবুজ ঘাসের সমারোহ এটির সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়েছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে রাশিয়ার চতুর্থ বড় শহর একেতেরিনবার্গ। এক সময় এটি পরিচিত ছিল লোহা তৈরির জন্য। এখন শহরটি পরিচিতি আধুনিকতার জন্য। এই শহরে বিশ্বখ্যাত স্থাপনার সঙ্গে অত্যাধুনিক বিমানবন্দর ও পাতাল রেল ব্যবস্থাপনা রয়েছে। বিশ্বকাপের সম্ভবত সবচেয়ে বিচিত্র একেতেরিনবার্গ অ্যারেনা স্টেডিয়াম এই শহরে।

সারানস্ক। মধ্য রাশিয়ার এই শহরকে বলা হয় ক্রীড়াবিদ তৈরির কারখানা। প্রতিবছর অন্তত ১০০ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নেন এখানকার অ্যাথলেটরা। ৮ লাখ মানুষের বসবাস এই শহরে। খেলা হবে মরডোভিয়া অ্যারেনা স্টেডিয়ামে।

কালিনিনগ্রাঁদ। মস্কো থেকে ১২শ কিলোমিটার দূরত্বে। শহরটি গুরুত্বপূর্ণ বাল্টিক সমুদ্রবন্দরের জন্য। এটি ইউরোপের অন্যতম প্রবেশদ্বারও। খ্যাতি আছে প্রিস্টিন সমুদ্র সৈকতেরও। কালিনিগাঁদ স্টেডিয়ামে খেলা হবে। শহরটি খুবই সুন্দর।

ভলগোগ্রাঁদ। জাহাজশিল্প, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম কারখানা এবং তেল পরিশোধনের জন্য বিখ্যাত। দেশটির ইকোট্যুরিজম সেন্টারও এই শহরটি। ভলগা নদীর তীর ঘেঁষা এই শহরটি রাশিয়ার শিল্প ক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছে। বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু শহরের স্টেডিয়াম ভলগোগ্রাঁদ অ্যারেনা।